বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বিধিমালাঃ একটি প্রয়োগিক পর্যালোচনা

ভূমিকাঃ 

কোন ব্যক্তি যদি তাঁর শারীরিক, মানসিক বা উভয়বিধ শ্রমের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময় পর পর নিয়মিত  পারিশ্রমিক পান তবে আমরা ধরে নিতে পারি তিনি চাকুরী করেন। যিনি চাকুরি করেন তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রমে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, কর্মস্থলে তাঁর অনুপস্থিতির দিন/দিনসমূহ ছুটি হিসাবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ একজন চাকুরীজীবির কর্মস্থলে অনুমোদিত অনুপস্থিতি কালকে ছুটি বা Leave বলা হয়। মোটকথা, কার্যদিবসে কোন বিধি বা আইনের আলোকে কোন চাকুরীজীবির কর্মস্থলে বা অফিসে অনুপস্থিত থাকার দিন বা দিনসমূহকে ছুটি বলা হয়। এই ছুটি বিভিন্ন ধরণ ও মেয়াদের হতে পারে। আবার সকল চাকুরীজীবি সরকার অনুমোদিত সকল ছুটি ভোগ করতে পারবেন না। চাকুরীর ধরণের উপর একজন চাকুরিজীবির ছুটি প্রাপ্যতা নির্ভর করে। এককথায়, একজন চাকুরীজীবি কেবল তাঁর জন্য প্রযোজ্য বিধানাবলি ও সরকারী আদেশ অনুসারে ছুটি প্রাপ্য হবেন এবং ভোগ করতে পারবেন।

ছুটি অনুমোদনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান বা নীতিমালা অনুসরণ করেন, যা ছুটি বিধিমালা নামে পরিচিত। নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা ১৯৫৯(The Prescribed Leave Rules 1959), মৌলিক বিধিমালা (Fundamental Rules), বাংলাদেশ চাকুরী বিধিমালা (Bangladesh Service Rules) এবং সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক জারীকৃত আদেশ দ্বারা ছুটি বিধিমালা নিয়ন্ত্রিত হয়। উক্ত বিধিমালা ও বিভিন্ন আদেশের আওতায় একজন সরকারী কর্মচারীর জন্য নিচে উল্লেখিত ছুটিসমূহের বিধান রয়েছেঃ

সরকারি ছুটি (Public Holiday), নৈমিত্তিক ছুটি(Casual Leave), অর্জিত ছুটি (Earned Leave), মাতৃত্বজনিত ছুটি (Maternity Leave), চিকিৎসালয় ছুটি (Hospital Leave), অধ্যয়ন ছুটি (Study Leave), বিনা বেতনে ছুটি (Leave without Pay), সংগনিরোধ ছুটি (Quarantine Leave), অসাধারণ ছুটি (Extraordinary Leave), অক্ষমতাজনিত বিশেষ ছুটি (Special Disability Leave), বিশেষ অসুস্থতাজনিত ছুটি (Special Sick Leave), অবকাশ বিভাগের ছুটি (Leave of Vacation Department), বিভাগীয় ছুটি (Departmental Leave), অপ্রাপ্য বা প্রাপ্যতা বিহীন ছুটি (Leave not Due ), অবসর উত্তর ছুটি (PR.L), বাধ্যতামূলক ছুটি (Compulsory Leave), চিত্তবিনোদন ছুটি (Rest & Recreation Leave), কর্তব্যকালীন ছুটি, কনটিনজেন্ট স্টাফদের জন্য ছুটি , সাময়িকভাবে বরখাস্তকালীন সময়ের জন্য ছুটি, দৈনিক ভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের ছুটি এবং জরীপ বিভাগীয় ছুটি ইত্যাদি।

এই নিবন্ধে উল্লেখিত সকল ধরণের ছুটি নিয়ে আলোচনা হবে না, শুধুমাত্র বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক/কর্মচারীদের সাথে সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ছুটি নিয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। কেননা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মরত প্রত্যেকেরই অন্তত: এই ছুটিগুলি সম্পর্কে সচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। 

১.১ সরকারি ছুটি (Public Holidays)

প্রত্যেক সরকারী কর্মচারীকে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তি, সরকারী নিবার্হী আদেশ এবং নিজ ধর্ম অনুসারে প্রতি পঞ্জিকা বছরে সর্বমোট ৩ দিন ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার যে সুযোগ প্রদান করে থাকে, তা-ই সরকারি ছুটি। সরকারি ছুটিসমূহকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ 

(ক) সাধারণ ছুটিঃ  সাধারণ ছুটি বলতে সাপ্তাহিক ছুটি এবং সরকারী গেজেটের মাধ্যমে প্রতি বছর যে সমস্ত দিনকে সাধারণ ছুটি হিসাবে ঘোষণা করা হয়, ঐ সমস্ত দিনকে বুঝায়। হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন ১৮৮১(Negotiable Instruments Act 1881) এর ২৫ ধারার ব্যাখ্যা অনুসারে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ  ধরণের ছুটির জন্য সরকার বছরের শুরুতেই গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারী করে। সরকারী বর্ষপঞ্জীতে এই জাতীয় ছুটির দিনগুলি লাল কালি দ্বারা চিহ্নিত করা থাকে। বর্তমানে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্রবার ও শনিবার) ছাড়াও সাধারণভাবে প্রতি পঞ্জিকা বছরের নিচে উল্লেখিত দিন বা তারিখগুলি সাধারণ সরকারি ছুটি হিসাবে গণ্য হয়ঃ 

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃষা দিবস (২১ ফেব্রুয়ারি),  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর জন্ম দিবস ( ১৭ মার্চ), স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস (২৫ মার্চ),  মে দিবস (১ মে),  জুমাতুল বিদা,  ঈদ-উল ফিতর (শুধুমাত্র ঈদের দিন),  জাতীয় শোক দিবস (১৫ আগস্ট),  বৌদ্ধ পূর্ণিমা,  ঈদ-উল আয্হা (শুধুমাত্র ঈদের দিন),  দুর্গাপূজা (শুধুমাত্র দশমীর দিন),  ঈদ-ই মিলাদুন্নবী,  জন্মাষ্টমী,  বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) এবং যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন (২৫ ডিসেম্বর) প্রভৃতি ।

(খ) নির্বাহী আদেশে ছুটিঃ সাধারণ সরকারী ছুটির সাথে সংযুক্ত করে অথবা আলাদাভাবে বছরের কোন কোন দিনকে সরকার, সরকারী আদেশের বলে ছুটি হিসাবে ঘোষণা করতে পারে। এইভাবে ঘোষিত ছুটির দিন বা দিনসমূহকে নির্বাহী আদেশে সরকারী ছুটি হিসাবে গণ্য করা হয়। এ জাতীয় ছুটিও গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় এবং সরকারী বর্ষপঞ্জীতে লাল কালি দ্বারা চিহ্নিত করা থাকে। অবশ্য সরকারি আদেশ বলে সরকার যে কোন সময় এই ধরনের ছুটি হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারে। 

সাধারণত নিচে উল্লেখিত দিন বা দিনসমূহকে সরকার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি হিসাবে ঘোষণা করে থাকেঃ

শব-ই বরাত,  বাংলা নববর্ষ,  শব-ই কদর, ঈদ-উল ফিতরের পূর্বের ও পরের দিন বা দিনসমূহ,  ঈদ-উল আযহার পূর্বের ও পরের দিন বা দিনসমূহ এবং  মহররম প্রভৃতি ।

(গ) ঐচ্ছিক ছুটিঃ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে যে সমস্ত ছুটি ভোগ করা কর্মচারীর ইচ্ছাধীন, তা-ই ঐচ্ছিক ছুটি। প্রতি বছর প্রত্যেক কর্মচারী তার নিজ ধর্ম অনুযায়ী সর্বমোট ৩ দিন ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করতে পারেন। প্রত্যেক কর্মচারীকে বছরের শুরুতে নিজ ধর্মের পর্ব অনুযায়ী নির্ধারিত ৩ দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার আবেদন/ দাবি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নিকট করতে হয়। আবেদনকৃত ঐচ্ছিক ছুটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন করিয়ে নেয়ার পরই কেবল সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে ঐচ্ছিক ছুটি ভোগের অনুমতি প্রদান করা যায়। 

সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ঐচ্ছিক ছুটির পর্বসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

মুসলিম পর্বঃ  শব-ই-মেরাজ, ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহার জন্য ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটির পরের দিন, আখেরী চাহার সোম্বা ও ফাতেহা ইয়াজদাহাম প্রভৃতি 

হিন্দু পর্বঃ  শ্রীপঞ্চমী, শিবরাত্রি, দোল যাত্রা, শ্রী শ্রী হরি ঠাকুরের জন্মদিন, মহালয়া, দুর্গাপূজা (নবমী), লক্ষ্মীপূজা ও কালীপূজা (শ্যামা পূজা) প্রভৃতি।

বৌদ্ধ পর্বঃ মাঘী পূর্ণিমা, চৈত্র সংক্রান্তি, আষাঢ়ী পূর্ণিমা, মধু পূর্ণিমা (ভাদ্র পূর্ণিমা) ও আশ্বিনী পূর্ণিমা (প্রবারণী পূর্ণিমা) প্রভৃতি।

খ্রিস্টান পর্বঃ ইংরেজি নববর্ষ, ভস্ম বুধবার, পুণ্য বৃহস্পতিবার, হলি স্যাটারডে, ইস্টার সানডে, যীশু খ্রিস্টের জন্মোৎসরের পূর্ব দিবস ও পরবর্তী দিবস প্রভৃতি।

১.২ সরকারী ছুটির শর্তাবলীঃ

ক) সরকারি ছুটিসমূহ সরকারী-বেসরকারী সকল অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বেলায় প্রযোজ্য। 

খ) যে সমস্ত অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, যথাঃ ব্যাংক, ডাক, তার, টেলিফোন, রেলওয়ে, হাসপাতাল ও রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বা ব্যবসায়ী সংস্থা ও কলকারখানা ইত্যাদি, যাদের নিজস্ব আইন-কানুন দ্বারা তাদের অফিসের সময়সূচী ও ছুটি নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে অথবা যে সমস্ত অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের চাকুরি সরকার কর্তৃক অত্যাবশ্যক চাকরি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, উহাদের বেলায় আপনা আপনি এই ছুটি প্রযোজ্য হবে না। ঐ সমস্ত অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান উহাদের নিজস্ব আইন-কানুন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে ছুটি ঘোষণা করবে। 

গ) সাধারণ ছুটি, নির্বাহী আদেশে সরকারী ছুটির সাথে সংযুক্ত করে ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। 

ঘ) সরকারী ছুটিসমূহ ভোগকালে কর্মস্থল ত্যাগে কোন বাধা নেই বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কোন বাধ্যবাধকতা নেই।  (বিএস আর,বিধি-১৫৩)

২.১ শিক্ষক/কর্মচারীদের ছুটি বিধি

সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ সরকারী চাকুরি বিধি এবং ১৯৫৯ সনের নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা মোতাবেক ছুটি ভোগ করেন। আর আমরা যারা বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রামে কর্মরত আছি তাঁরা বেপজা কর্তৃক অনুমোদিত সংবিধান, বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ, বাংলাদেশ এর ধারা ১৪ থেকে ২৩-এর বিধান অনুসারে ছুটি প্রাপ্য হবেন এবং ভোগ করবেন। উল্লেখ্য যে, উক্ত সংবিধানের ধারা ১৪-২৩ পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, সরকারী স্কুল/কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারীগণ যে সমস্ত ছুটি ভোগ করেন বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ-এর শিক্ষক ও কর্মচারীরাও একই ছুটি ভোগের সুবিধা পাবেন।  ধারা-২৩ এ  বলা হয়েছে, ধারা ১৪-২২ যা কিছুই থাকুন না কেন ছুটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হলেও তা অধিকার হিসেবে দাবী করা যাবে না। প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ছুটি মঞ্জুরীর আবেদন প্রত্যাখান করতে পারেন। এমনকি মঞ্জুরীকৃত ছুটির আদেশ বাতিল করে শিক্ষক/কর্মচারীকে কাজে যোগদানের নির্দেশ দিতে পারেন । বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজের শিক্ষক/কর্মচারী হিসাবে ১ বৎসর চাকুরি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন শিক্ষক/কর্মচারী নৈমিত্তিক ছুটি ও ১৫(পনের) দিনের চিকিৎসা ছুটি ব্যতীত অন্য কোন ছুটি প্রাপ্য হবে না। 

২.১ ছুটির প্রকারভেদ

বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ-এর শিক্ষক/কর্মচারীগণ প্রতিষ্ঠানের সংবিধানের ধারা ১৪-২২ অনুসারে  নিম্নোক্ত ধরনের ছুটি প্রাপ্য হবেনঃ 

(ক) নৈমিত্তিক ছুটি(ধারা-১৫), (খ) অর্জিত ছুটি(ধারা-১৬), (গ) চিকিৎসা ছুটি(ধারা-১৭), (ঘ) সংগনিরোধ ছুটি (ধারা-১৮)(ঙ) প্রসবকালীন ছুটি(ধারা-১৯), (চ) অসাধারণ ছুটি(ধারা-২০) (ছ) কর্তব্য ছুটি(ধারা-২১) এবং (জ) অধ্যয়ন ছুটি (ধারা-২২)  ইত্যাদি।

৩.১ নৈমিত্তিক ছুটি(Casual Leave)

নৈমিত্তিক কারণে যে ছুটি পাওয়া যায় তাকে নৈমিত্তিক ছুটি বলে। এখানে নৈমিত্তিক বলতে ছোট খাট অসুস্থতা, স্বল্প সময়ের জন্য ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইত্যাদির প্রয়োজন বুঝায়। গুরুতর অসুস্থতা অথবা দীর্ঘ দিনের প্রয়োজন নৈমিত্তিক হিসেবে গণ্য নয়। প্রতি পঞ্জিকা বছরে নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিন। নৈমিত্তিক ছুটিকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক/কর্মচারী কর্তব্য কর্মেরত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ ধরণের ছুটি হতে প্রত্যাবর্তনের পর যোগদানপত্র দাখিল করতে হয় না। এই ছুটি বর্ধিত করণের কোন বিধান নাই ।

নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে বিদেশ গমন করা যাবে না। নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি আবশ্যক। কোন শিক্ষক/কর্মচারীকে পরিচালনা পরিষদের অনুমোদনক্রমে অসুস্থতা বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা যাবে।

৩.২ নৈমিত্তিক ছুটির শর্তাবলী

(ক) প্রত্যেক শিক্ষক/কর্মচারীকে এক পঞ্জিকা বর্ষে সর্বাধিক ২০ (বিশ) দিন (সরকারী নির্দেশ মোতাবেক এই দিনের সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে) নৈমিত্তিক মঞ্জুর করা যায়।

(খ) নৈমিত্তিক ছুটিজনিত অনুপস্থিতিকে কাজে অনুপস্থিত হিসাবে গণ্য করা হয় না এবং কর্তব্যে কর্মরত হিসাবে বিবেচনা করা হয় বিধায় কোন শিক্ষকের নৈমিত্তিক ছুটি ভোগের কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদানসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশংকা থাকলে নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না। 

(গ) কোন শিক্ষক/কর্মচারীকে এক সাথে ১০ (দশ) দিনের বেশি নৈমিত্তিক ছুটি দেয়া যাবে না।

(ঘ) কোন শিক্ষক/কর্মচারী আবেদন জানালে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) দিনের নৈমিত্তিক ছুটি এক বা একাধিকবার কোন সাপ্তাহিক ছুটি বা সরকারী ছুটি বা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত তালিকাভূক্ত অন্যান্য ছুটির পূর্বে অথবা পরে সংযুক্তির অনুমতি দেয়া যাবে।

(ঙ) নৈমিত্তিক ছুটির উভয় দিকে অন্য কোন প্রকার ছুটি সংযুক্ত করা যাবে না । 

(চ) কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া নৈমিত্তিক ছুটি ভোগকারী কোন শিক্ষক/কর্মচারী নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।

(ছ) নৈমিত্তিক ছুটিতে থাকাকালে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেয়া যাবে না এবং দেশের ভিতরে নিজ কর্মস্থল থেকে এমন দুরত্বে যাওয়ার অনুমতি দেয়া যাবে না যেখান হতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক/কর্মচারীর কর্মস্থলে পৌঁছতে স্বাভাবিকভাবে ৪৮ ঘন্টার বেশি সময় লাগে।

৪.১ চিকিৎসা ছুটি

বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ-এর কর্মরত একজন স্থায়ী শিক্ষক/কর্মচারী প্রতিটি পূর্ণ বছরের চাকুরির জন্য ১০(দশ) দিনের চিকিৎসা ছুটি পাওয়ার অধিকারী হবেন। কোন শিক্ষক/কর্মচারীর চিকিৎসা ছুটি প্রয়োজন হলে রেজিষ্টার্ড মেডিকেল অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেটসহ অধ্যক্ষ মহোদয়ের নিকট  কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বরাবর আবেদন করতে হবে। ৭ দিন পর্যন্ত চিকিৎসা ছুটি অধ্যক্ষ মহোদয় অনুমোদন ও মঞ্জুর করতে পারবেন। কিন্তু চিকিৎসা ছুটি ৭ দিনের বেশি হলে তা কলেজ পরিচালন পরিষদ অনুমোদন ও মঞ্জুর করবে।

৪.২ চিকিৎসা ছুটির শর্তাবলী  

(ক) স্বাস্থ্যগত কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে রেজিষ্টার্ড মেডিকেল অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে কোন শিক্ষক/কর্মচারীকে পূর্ণ গড় বেতনে ১(এক) মাস ও অর্ধ গড় বেতনে ৩(তিন) মাসসহ সর্বমোট ৪(চার) মাস মেডিকেল/চিকিৎসা/স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটি মঞ্জুর করা যায়।

(খ) ৭(সাত) দিনের অতিরিক্ত স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটির ক্ষেত্রে যোগদানের পূর্বে রেজিষ্টার্ড মেডিকেল অফিসার/মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত ফিটনেস সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে ।

(গ) ক্ষেত্র বিশেষে কলেজ পরিচালনা পরিষদ কোন শিক্ষক/কর্মচারীকে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিনা বেতনে চিকিৎসা ছুটি মঞ্জুর করতে পারে।

৫.১ সংগনিরোধ ছুটি

বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ-এ কর্মরত কোন শিক্ষক/কর্মচারী নিজে ব্যতীত তার পরিবারের কোন সদস্য সংক্রামক ব্যাধি (যথাঃ গুটি বসন্ত, কলেরা, প্লেগ, টাইফয়েড জ্বর, সেরিব্রোস্পাইনাল মেনেনজাইটিস) দ্বারা আক্রান্ত হলে রেজিষ্টার্ড মেডিকেল অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক/কর্মচারীকে সংক্রামক রোগ নিরোধ/সংগনিরোধ ছুটি মঞ্জুর করা হবে।  

৫.২ সংগনিরোধ ছুটির শর্তাবলী  

১। কলেজ পরিচালন পরিষদের সভাপতি/সংশ্লিষ্ট জোনের নির্বাহী পরিচালক/সংশ্লিষ্ট কলেজ অধ্যক্ষ এই প্রকার ছুটির মঞ্জুর করতে পারবেন। 

২। শিক্ষক/কর্মচারী নিজে ব্যতীত তার পরিবারের কোন একজন বা সকল সদস্য সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে এবং উক্ত রোগ কর্মচারীর মাধ্যমে অফিসে বিস্তার লাভের সম্ভাবনা থাকলে ডাক্তারী সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে ২১ দিন পর্যন্ত এই প্রকার ছুটি প্রদান করা যাবে। অবশ্য বিশেষ ক্ষেত্রে এই ছুটির মেয়াদ ৩০ দিন পর্যন্ত বর্ধিত করা যাবে। ইহার অতিরিক্ত ছুটির প্রয়োজন হইলে এই অতিরিক্ত ছুটি সাধারণ ছুটি হিসাবে গণ্য হবে।

৩। এই প্রকার ছুটিকে কর্মকালীন সময় হিসাবে গণ্য করা হয় এবং এই সময়ে উক্ত পদে অন্য কোন লোক নিয়োগ করা যায় না এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক/কর্মচারী স্বাভাবিক নিয়মানুসারে বেতন ভাতাদি পাবেন। 

৪। এই প্রকার ছুটি ছুটি হিসাব হইতে বিয়োগ হয় না এবং ছুটির হিসাবের জন্যও এই প্রকার ছুটিকে কর্মকালীন সময় হিসাবে গণ্য করা হবে। 

৬.১  প্রসূতি/প্রসবকালীন/মাতৃত্বজনিত ছুটি (Maternity Leave)

প্রসূতি ছুটির মেয়াদ ৬(ছয়) মাস। বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ-এ কর্মরত কোন মহিলা শিক্ষিক/কর্মচারী গর্ভবর্তী হওয়ার পর যে তারিখ থেকে ছুটিতে যাওয়ার আবেদন করবে, কলেজ পরিচালনা পরিষদকে ঐ তারিখ থেকে প্রসূতি ছুটি মঞ্জুর করতে হবে। তবে সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখে চাকুরির মেয়াদ ৯ (নয়) মাস পূর্ণ না হলে , ঐ রূপ অস্থায়ী শিক্ষিক/কর্মচারীকে প্রসূতি ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না ।তবে মাতৃত্বজনিত কারণে এরূপ অস্থায়ী শিক্ষিক/কর্মচারীকে অর্জিত ছুটি/অসাধারণ ছুটি প্রদান করা যাবে। কোন মহিলা শিক্ষক/কর্মচারী তাঁর সমগ্র চাকুরীকালে ২(দুই) বারের বেশি প্রসূতি ছুটি ভোগ করতে পারবেন না।

৬.২ প্রসূতি ছুটির শর্তাবলী

১। কোন মহিলা শিক্ষিক/কর্মচারী গর্ভবতী হওয়ার যে তারিখ থেকে ছুটির আবেদন করবে, ঐ তারিখ থেকে ৬ (ছয়) মাসের ছুটি মঞ্জুর করতে হবে। তবে এই ছুটি আরম্ভ হওয়ার তারিখ সন্তান প্রসবের উদ্দেশ্যে আতুর ঘরে প্রবেশ করার পরবর্তী কোন তারিখ হতে পারিবে না। গর্ভবতী হওয়ার সপক্ষে ডাক্তারী সার্টিফিকেট দাখিল করার পর কর্তৃপক্ষ ছুটি না মঞ্জুর করার ক্ষমতা রাখেন না। আবার ছয় মাস অপেক্ষা কম সময় ছুটি মঞ্জুর করা কিংবা ছুটির তারিখ পরিবর্তনের ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের নাই।

২। গেজেটেড কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে সরকার অথবা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারীদের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই ছুটি মঞ্জুর করতে পারেন। অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রেই অর্জিত ছুটি মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্রসূতি ছুটি মঞ্জুরির জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। 

৩। একজন মহিলা শিক্ষক/কর্মচারীকে বেতন ও ভাতাদিসহ এই ধরনের মাতৃত্বজনিত ছুটি তার সমস্ত চাকরি জীবনে ২ বারের বেশি প্রদান করা যাবে না। 

৪। এই ছুটি সংশ্লিষ্ট মহিলা শিক্ষক/কর্মচারীর ছুটির হিসাব হতে বাদ যাবে না। কারণ প্রসূতি ছুটি অর্জন করতে হয় না। 

৫। এই সময়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মহিলা শিক্ষক/কর্মচারীর সেই হারে পূর্ণ বেতন পাবেন যা ছুটি নেওয়ার পূর্বে তিনি উত্তোলন করেছিলেন।

৬। যদি কোন মহিলা শিক্ষক/কর্মচারী মাতৃত্বজনিত ছুটির ধারাবাহিকতাক্রমে পূর্ণগড় বেতনে ছুটিসহ অন্য যে কোন প্রকার ছুটির জন্য আবেদন করেন সেইক্ষেত্রে তাহাকে মেডিকেল প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চাকরি বিধিমালার বিধি-১৮৪-এর অনুচ্ছেদ (বি) তে অনুমোদিত সীমা পর্যন্ত মাতৃত্বজনিত ছুটি মঞ্জুর করা যাতে পারে।

৭। অস্থায়ী মহিলা শিক্ষক/কর্মচারীও স্থায়ী মহিলা শিক্ষক/কর্মচারীর অনুরূপ সময় পর্যন্ত প্রসূতি ছুটি প্রাপ্য হবেন। এফ আর এর এস আর-২৬৭ এর সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক তা মঞ্জুর করা যাবে।  

৭.১ অধ্যয়ন ছুটি (Study Leave)

সরকার কর্তৃক আরোপিত শর্ত মোতাবেক অথবা কলেজ পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য অধ্যয়ন ছুটি মঞ্জুর করা যায়। সরকারী বা পরিচালনা পরিষদের মনোনয়নক্রমে বি.এড. বি. পি. এড. এম, এড ইত্যাদি কোর্সে ভর্তির সুযোগ থাকলে প্রশিক্ষণবিহীন জ্যেষ্ঠত শিক্ষক সংশ্লিষ্ট কোর্সে ভর্তির জন্য মনোনয়ন প্রাপ্তির যোগ্য বলে গণ্য হবেন। সরকার/কলেজ পরিচালনা পরিষদ যদি মনে করে যে, কোন প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক/ সহযোগী অধ্যাপক কোন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী (এম.ফিল. পি. এইচ. ডি ইত্যাদি) লাভ করলে তাঁর পেশাগত জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে তাহলে তাঁর অধ্যয়ন ছুটি মঞ্জুর করতে পারে। ছুটিপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এ মর্মে অঙ্গীকার প্রদান করবেন যে অধ্যয়ন শেষে তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৫ (পাঁচ) বৎসর চাকুরি করবেন। 

৭.২ অধ্যয়ন ছুটির শর্তাবলী

১। একমাত্র সরকার/কলেজ পরিচালনা পরিষদই অধ্যয়ন ছুটি মঞ্জুর করতে পারে ।

২। অধ্যয়ন ছুটির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে অর্ধগড় বেতনে অতিরিক্ত ছুটি (Extra leave) নেওয়া যাবে। যেসব শিক্ষকের চাকুরি ৫(পাঁচ) বছর পূর্ণ হয় নাই তাদেরকে অথবা ৩(তিন) বছরের মধ্যে অবসর গ্রহণের কথা রয়েছে এমন শিক্ষককে অথবা ২৫ (পঁচিশ) বৎসর চাকুরি করার পর কোন শিক্ষকের অবসর গ্রহণের কথা থাকলে উক্ত ২৫ (পঁচিশ)বছর চাকুরি সমাপ্ত হবার ৩(তিন) বছর সময়কালের মধ্যে অথবা যে সব শিক্ষক আনুপাতিক পেনশনে সহসাই অবসর গ্রহণ (About to retire) করবেন তাদেরকে সাধারণভাবে অধ্যয়ন ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না। 

৩। কেবলমাত্র চাকরির প্রয়োজনই অধ্যয়নে ছুটি মঞ্জুর করা যাবে। এক সাথে ১২(বারো) মাস পর্যন্ত অধ্যয়ন ছুটিই সর্বাধিক সন্তোষজনক পরিমাণ বিবেচিত হবে এবং ব্যতিক্রমধর্মী কোন কারণ না থাকলে উক্ত ছুটির মেয়াদ ১২ (বারো) মাসের বেশি বর্ধিত করা যাবে না। কোনক্রমেই একজন শিক্ষককে তাঁর সারাজীবন চাকুরিকালীন সময়ের জন্য ২(দুই) বছরের বেশি অধ্যয়ন ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না অথবা এমন সময়ের ব্যবধানে এই ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না যাতে তাঁর দৈনন্দিন কর্মের সাথে যোগাযোগ রহিত হয় এবং ছুটিজনিত অনুপস্থিতির কারণে ক্যাডারে নানা জটিলতার অবতারণা ঘটে। এই ২( দুই) বৎসর অধ্যয়ন ছুটির সাথে অসাধারণ ছুটি অথবা মেডিকেল প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে প্রদত্ত ছুটি ছাড়া ৪(চার) মাস পর্যন্ত অন্য যে কোন প্রকার ছুটি একত্রে প্রদান করা যেতে পারে। এই ৪(চার) মাসের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর অর্থাৎ একজন শিক্ষকের নিয়মিত কর্ম হতে (২৪ + ৪) = ২৮ মাস অনুপস্থিতির প্রশ্ন জড়িত থাকলে সেক্ষেত্রে উক্ত সময়ের অতিরিক্ত ছুটি অসাধারণ ছুটি অথবা মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে ছুটি বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, বি এস আর পার্ট-১ এর বিধান মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর সামগ্রিক অনুপস্থিতি কোনক্রমেই ৫ (পাঁচ)বছরের অধিক হবে না।

৪। পেনশন ও পদোন্নতির জন্য চাকরিকাল গণনায় অধ্যয়ন ছুটিকে কর্মরত বলে গণনা করা হবে। ইতিমধ্যে একজন শিক্ষক অন্য যেসব ছুটি বিধি মোতাবেক প্রাপ্ত হয়েছেন অধ্যয়ন ছুটি উহাকে কোনরূপ প্রভাবিত করবে না। এই ছুটি অর্ধ-গড় বেতনে অতিরিক্ত ছুটি হিসাবে গণ্য হবে কিন্তু অর্ধ-গড় বেতনের ছুটির সর্বসাকুল্যে হিসাবের মধ্যে ইহা অন্তর্ভুক্ত হবে না।

৫ । এই প্রকার ছুটির একজন শিক্ষক ছুটিকালীন সময়ে শিক্ষা ভাতা পাবেন এবং অতিরিক্ত ৪(চার) মাস ছুটির জন্য অর্ধ-গড় বেতনে ছুটিকালীন বেতন প্রাপ্য হবেন ।

৬। অধ্যয়ন ছুটির প্রতিটি আবেদন নিরীক্ষা কর্মকর্তার সার্টিফিকেটসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাখিল করতে হবে এবং সে কোর্সে বা পরীক্ষার অংশগ্রহণ করতে যেতে, উহার পূর্ণ বিবরণ দিবেন ।

৭। কোর্সের ফি সংশ্লিষ্ট কর্মচারী নিজে বহন করবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনাপূর্বক প্রদান করতে পারেন । 

৮। কোর্স সমাপ্তিতে উহার সার্টিফিকেট সরকার/পরিচালন পরিষদের নিকট দাখিল করতে হবে।

৯। অধ্যয়ন ছুটিকাল পদোন্নতি ও পেনশনের জন্য কর্মকাল হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু “ছুটি হিসাব” এর জন্য কর্মকাল হিসেবে গণনাযোগ্য নয়। এই ছুটি ইতোমধ্যে জমাকৃত ছুটি হতে বাদ যাবে না। এই প্রকার ছুটি অর্ধ-গড় বেতনে অতিরিক্ত ছুটি হিসাবে গণ্য হবে। তবে পাওনা অর্ধ-গড় বেতনের ছুটি হতে বাদ যাবে না ।

১০। অডিট রুলিং (এফ আর ৮৪) এর বিধান মোতাবেক কোন কর্মকর্তার ৫(পাঁচ) বৎসরের চেয়ে কম চাকরি হলে তাকে অধ্যয়ন ছুটি মঞ্জুর করা ছুটি মঞ্জুরীর ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাধীন। অর্থাৎ ছুটি মঞ্জুরীর ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষ তার নিয়ন্ত্রণাধীন কোন শিক্ষককে তাঁর ৫(পাঁচ) বৎসরের কম চাকুরি থাকলেও অধ্যয়ন ছুটি মঞ্জুর করতে পারেন। 

১১। অধ্যয়ন ছুটির সাথে সংযুক্তভাবে অন্য প্রকার ছুটি নেওয়া হলে অধ্যয়ন ছুটির মেয়াদ এইরূপ হবে যেন পূর্বে মঞ্জুরকৃত অন্যান্য ছুটির জের তার কর্মে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত যথেষ্ট হয়।

১২। কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত অধ্যয়ন ছুটি মঞ্জুর করার পরবর্তী পর্যায়ে যদি দেখা যায় কোর্সটি ঐ মঞ্জুরকৃত মেয়াদের পূর্বেই সমাপ্ত হইয়াছে, তাহা হলে ঐ অতিরিক্ত সময় মঞ্জুরকৃত অধ্যয়ন ছুটি হতে বাদ যাবে, যদি না তিনি মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষের নিকট হতে ঐ অতিরিক্ত সময় সাধারণ ছুটি হিসাবে গণ্য করার অনুমতিগ্রহণ করেন।

১৩। অধ্যয়ন ছুটির প্রতিটি আবেদন নিরীক্ষা কর্মকর্তার সার্টিফিকেটসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাখিল করতে হবে এবং যে কোর্সে বা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, উহার পূর্ণ বিবরণ দিবেন। 

১৪। কোর্সের ফি সংশ্লিষ্ট কর্মচারী নিজে বহন করবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনারপূর্বক প্রদান করতে পারেন।

১৫। কোর্স সমাপ্তিতে উহার সার্টিফিকেট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে  হবে।

১৬। অধ্যয়ন ছুটি ভোগকালে অর্ধ-গড় বেতনে ছুটিকালীন বেতন প্রাপ্য।

নোট : অধ্যয়ন ছুটির সাথে একত্রে অন্যান্য ছুটির ২৮(আটাশ) মাসের অনুপস্থিতির মধ্যে কোন বন্ধ থাকলে তা উক্ত ছুটির অন্তর্ভুক্ত হবে।

৮.১ কর্তব্য ছুটি (Leave on Duty)

নিম্নোক্ত বিষয়ে বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ-এর শিক্ষককে কর্তব্য ছুটি মঞ্জুর করা যাবেঃ 

(ক) পরীক্ষা পরিচালনা

(খ) সরকারী, পরিচালনা পরিষদ, শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোন আইন সংগত সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত সম্ভাব্য সেমিনারে যোগদান । 

(গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাপ্ত আদালতের আদেশ বলে আদালতে জুরী বা রাজস্বাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হওয়া। 

(ঘ) পারিশ্রমিক ছাড়া সরকার বা সরকারী সংস্থা বা শিক্ষা বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত কোন কমিটির সভায় সদস্য হিসেবে যোগদান। 

(ঙ) সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বা শিক্ষা বোর্ডের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আইনসংগত কোন সংস্থা বা সমিতিতে যোগদান।

(চ) যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভাষণদানের জন্য যোগদান। 

৯.১  অসাধারণ ছুটি (Extraordinary Leave)

বিনা বেতনে ছুটিকে অসাধারণ ছুটি বলা হয়। বিধি মোতাবেক অপর কোন ছুটি পাওনা না থাকলে অথবা সংশ্লিষ্ট সরকারি চাকুরে লিখিতভাবে অসাধারণ ছুটির জন্য আবেদন করলে এ ছুটি মঞ্জুর করা হয়। ছুটি ভোগকারীর হিসাব হতে অসাধারণ ছুটি ডেবিট করা হয় না।

কোন শিক্ষক/কর্মচারীকে বিধি মোতাবেক ছুটি মঞ্জুর করা সম্ভব না হলে বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষক/কর্মচারী নিজে আবেদন করলে তাঁর অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করা যায়। অসাধারণ ছুটি ভোগকালে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক/কর্মচারী বেতন ও ভাতাদি পাবেন না  এবং উক্ত সময়কাল তার চাকুরির জ্যৈষ্ঠতা নির্ধারণের বিবেচিত হবে না । 

প্রাপ্য ছুটি না থাকলে অথবা অনুমোদিতভাবে অনুপস্থিত থাকলে অথবা সাময়িকভাবে বরখাস্তকালীন সময় (তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে) বিনা বেতনে ছুটি মঞ্জুর করা যায়। অন্যান্য প্রকার ছুটির সাথে একত্রে অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করা যেতে পারে।

৯.২ অসাধারণ ছুটির শর্তাবলী

অসাধারণ ছুটি সম্পর্কিত বিধিমালা নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ এর বিধি- ৯(৩) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উক্ত বিধিটি নিম্নরূপ—

১। অসাধারণ ছুটি, যার জন্য ছুটিকালীন বেতন প্রদেয় নয়, যে কোন সরকারি কর্মচারীকে বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রদান করা যেতে পারে-

(এ) যখন বিধিমতে অন্য কোন প্রকার ছুটি প্রাপ্য নয়; অথবা 

(বি) যখন অন্য কোন প্রকার ছুটি প্রাপ্য হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী লিখিতভাবে অসাধারণ ছুটির জন্য আবেদন জানায়। 

২। (এ) স্থায়ী কর্মে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী ব্যতীত অন্যান্যের ক্ষেত্রে অসাধারণ ছুটির মেয়াদ এককালীন ৩ (তিন) মাসের অধিক হবে না। তবে বিধান থাকে যে, স্থায়ী কর্মে নিয়োজিত নয় এমন যে সরকারি কর্মচারী বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে প্রশিক্ষণ সমাপনান্তে ৫ (পাঁচ) বৎসর সরকারের চাকরি করবেন, এই মর্মে বন্ড প্রদান করেছেন এবং চাকরির মেয়াদ নিরবচ্ছিন্নভাবে কমপক্ষে ৩ (তিন) বৎসর পূর্ণ হয়েছে, এরূপ যে সরকারি কর্মচারী উল্লেখিত প্রকার বন্ড প্রদান পূর্বক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণে বা অধ্যয়নে রত রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। আরো বিধান থাকে যে, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে অস্থায়ী সরকারি কর্মচারীকে সর্বাধিক ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত অসাধারণ ছুটি প্রদান করা যাবে।

(বি) যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত একজন অস্থায়ী সরকারি কর্মচারীকে এককালীন সর্বাধিক ১২ (বার) মাস পর্যন্ত অসাধারণ ছুটি প্রদান করা যেতে পারে, তবে বিধান থাকে যে— যে পদ হতে সরকারি কর্মচারী ছুটিতে যাচ্ছেন, ঐ পদটি তাঁর কর্মে প্রত্যাবর্তন অবধি বহাল থাকবে। 

দাখিলকৃত সার্টিফিকেটে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ বা সিভিল সার্জনের ছুটির মেয়াদ উল্লেখপূর্বক সুপারিশ থাকলে অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করা যাবে। সুপারিশ প্রদানকালে মেডিকেল অফিসার বি এস আর, পার্ট-১ এর পরিশিষ্ট-৮ এর বিধি-(৭) অনুসরণ করবেন। 

৩। ছুটি অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ ছুটিবিহীন অনুপস্থিত কালকে ভূতাপেক্ষিকভাবে অসাধারণ ছুটিতে রূপান্তর করতে পারবেন।

১০.১ অর্জিত ছুটি (Earned Leave)

শিক্ষা বিভাগ অবকাশ বিভাগ বিধায় কোন শিক্ষক স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত ছুটির অধিকারী হবেন না। তবে কোন শিক্ষক যদি সরকারী নির্দেশে বা যুক্তি সংগত কারণে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের নির্দেশে কোন পূর্ণ অবকাশ বা অবকাশের অংশবিশেষ ভোগ করতে না পারেন, তবে তিনি অবকাশ ভোগ করেন নাই এমন দিনের জন্য অর্জিত ছুটির অধিকারী হবেন।

কর্মকালীন সময়ে যে ছুটি অর্জিত হয় তাই অর্জিত ছুটি [বি, এস, আর পার্ট-১ -এর ১৪৫বিধি]। অর্জিত ছুটি দুই প্রকার। যেমন—

(ক) পূর্ণ গড় বেতনে অর্জিত ছুটি এবং 

(খ) অর্ধ-গড় বেতনে অর্জিত ছুটি। 

নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা,১৯৫৯ এর সেকশন ৮ এ  অবকাশ বিভাগের কর্মচারীর অর্জিত ছুটি সম্পর্কে

নিম্নরূপ বিধান রয়েছেঃ

১। (এ) অবকাশ বিভাগের স্থায়ী কাজে নিয়োজিত কোন সরকারি কর্মচারী যে বছর পূর্ণ অবকাশ ভোগ করবেন, সে বছরের কর্মকালীন সময়ের জন্য গড় বেতনে তিনি কোন ছুটি প্রাপ্য হবেন না ।

(বি) অনুরূপ সরকারি কর্মচারী যে বছর পূর্ণ অবকাশ ভোগ করেন নাই উক্ত বছরের জন্য নির্ধারিত পূর্ণ অবকাশের জন্য সুপিরিয়র সার্ভিসের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ৩০ দিন, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ১৫ দিন, এই অনুপাতে যে কদিন অবকাশ ভোগ করেন নাই, সেই কদিনের জন্য গড় বেতনে ছুটি পাবেন।

(সি) অনুরূপ সরকারি কর্মচারী যে বছর কোন অবকাশ ভোগ করেন নাই, অবকাশ বিভাগের কর্মচারী না হলে যে হারে তিনি ছুটি ভোগ করতে পারতেন, উক্ত বছরের জন্য তিনি ঐ হারে গড় বেতনে ছুটি পাবেন।

(ডি) অনুরূপ সরকারি কর্মচারীগণ অপরাপর সরকারি কর্মচারীদের মত অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি অর্জন ও ভোগ করতে পারবেন।

২।  স্থায়ী কাজে নিয়োজিত নয় অবকাশ বিভাগের এমন সরকারি কর্মচারীগণ ৩০ জুন, ১৯৫৯ তারিখে তাদের উপর প্রযোজ্য ছুটি বিধান দ্বারা পরিচালিত হবেন। কিন্তু যে তারিখে তার অস্থায়ী চাকুরির মেয়াদ নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ৩ (তিন) বছর পূর্ণ হবে অথবা যে তারিখে তিনি কোন স্থায়ী পদে নিয়মিত ভাবে নিয়োগ পাবেন, ইহাদের মধ্যে যাহা আগে ঘটবে, ৫নং বিধির ক্ষেত্র ছাড়া, ঐ তারিখ থেকে তিনি ছুটি প্রাপক হিসেবে স্থায়ী কর্মে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য হবেন এবং তিনি যদি অবকাশ বিভাগের স্থায়ী কর্মে নিয়োজিত হতেন, তাহলে যে ভাবে চাকুরিতে যোগদানের তারিখ থেকে ছুটি প্রাপ্য হতেন তারা সেভাবে তার “ছুটি হিসাব” এ ছুটি জমা হবে। ইতোমধ্যে ভোগকৃত ছুটি এই জমাকৃত ছুটি থেকে বাদ যাবে ।

নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ অনুযায়ী স্থায়ী সরকারী কর্মচারীদের জন্য পূর্ণগড় বেতন ও অর্ধগড় বেতনে অর্জিত ছুটির বিধানাবলী নিম্নরূপঃ

১০.২. পূর্ণগড় বেতনে অর্জিত ছুটি 

১। একজন স্থায়ী শিক্ষক/কর্মচারী প্রতি ১১ দিন কর্মকালীন সময়ের জন্য ১(এক) দিন করে পূর্ণগড় বেতনে ছুটি অর্জিত হবে এবং সর্বোচ্চ ৪(চার) মাস পর্যন্ত এই ছুটি জমা হবে। এই চার মাসের অতিরিক্ত সময়ের অর্জিত ছুটি তার ছুটির হিসাবে আলাদাভাবে জমা হবে। এই আলাদাভাবে জমাকৃত ছুটি হতে মেডিকেল প্রত্যয়নপত্র উপস্থাপনসাপেক্ষে, ধর্মীয় পুণ্যস্থানসমূহ দর্শনের উদ্দেশে, শিক্ষা বা চিত্তবিনোদনের নিমিত্তে ভারত, বার্মা ও শ্রীলংকার বাহিরে পূর্ণগড় বেতনে ছুটি প্রদান করা যাবে।

২। একজন স্থায়ী শিক্ষক/কর্মচারীকে এক সাথে সর্বোচ্চ ৪(চার) মাসের বেশি পূর্ণগড় বেতনে ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না।তবে মেডিকেল প্রত্যয়নপত্র সাপেক্ষে বা ধর্মীয় পুণ্যস্থানসমূহ দর্শনের উদ্দেশ্যে, শিক্ষা বা চিত্তবিনোদনের নিমিত্তে ভারত, বার্মা ও শ্রীলংকার বাহিরে ৪(চার) মাসের অতিরিক্ত হিসাবে এই ছুটির সীমা ৬(ছয়) মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। 

১০.৩ অর্ধগড় বেতনে ছুটি 

১। একজন স্থায়ী শিক্ষক/কর্মচারীর কর্মকালীন সময়ের প্রতি ১২ দিনের জন্য ১ দিন করে অর্ধগড় বেতনে ছুটি অর্জিত হবে এবং এই ছুটি সীমাহীনভাবে জমা হতে থাকবে।

২। সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত অর্ধগড় বেতনের ছুটিকে পূর্ণগড় বেতনের ছুটিতে রূপান্তরিত করা যাবে। তবে মেডিকেল প্রত্যয়ন পত্র ছাড়া অর্ধগড় বেতনের ছুটিকে পূর্ণগড় বেতনের ছুটিতে রূপান্তরিত করা যাবে না। এই রূপান্তরের হার হতে প্রতি দুই দিনের অর্ধগড় বেতনের ছুটির জন্য এক দিনের পূর্ণগড় বেতনের ছুটি ।

১০.৪ অস্থায়ী কর্মচারীর পূর্ণ ও অর্ধগড় বেতনে ছুটি

১। ধারাবাহিকভাবে কোন সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ৩(তিন) বৎসর পূর্ণ না হলে এ সময়ে কর্মকালীন প্রতি ২২ দিনের জন্য ১ দিন করে পূর্ণগড় বেতনে অর্জিত ছুটি পাবেন এবং সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত এই ছুটি জমা হবে।

২। ধারাবাহিকতাক্রমে একজন সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ তিন বৎসর পূর্ণ না হলে তিনি ঐ সময়ে কর্মরত প্রতি ৩০ দিনের জন্য ১ দিন করে অর্ধগড় বেতনে ছুটি পাবেন এবং মেডিকেল প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে এই ছুটি প্রদান করা যাবে।

১০.৫ গড় বেতনে ও অর্ধ-গড় বেতনে ছুটির শর্তাবলী

ক) গড় বেতনে অর্জিত ছুটিঃ

১) ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণেঃ 

নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ এর বিধি-৩(১)(ii) অনুযায়ী একজন সরকারী কর্মচারী ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে এককালীন সর্বোচ্চ ৪ (চার) মাসের গড় বেতনে ছুটি ভোগ করতে পারে।

২) স্বাস্থ্যগত কারণেঃ 

নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ এর বিধি-৩(১)(ii) অনুযায়ী একজন কর্মচারী স্বাস্থ্যগত কারণে এককালীন সর্বোচ্চ ৬ (ছয়) মাসের গড় বেতনে ছুটি ভোগ করতে পারে। ইহার অতিরিক্ত ছুটির প্রয়োজন হলে তা অর্ধ-গড় বেতনে ভোগ করতে পারবেন। অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি পাওনা না থাকলে নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ এর বিধি ৯ এর উপ-বিধি (৩) এর অধীনে অসাধারণ ছুটি ভোগ করতে পারবে। বি এস আর পার্ট-১ এর বিধি-১৫৭ এবং পরিশিষ্ট -৮ এর বিধান মোতাবেক স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটির ক্ষেত্রে ছুটির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করতে হবেঃ

ক) ছুটির আবেদনের সাথে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে (অনুচ্ছেদ-৯ ও ১৫) । 

খ) স্বাস্থ্যগত কারণে ৩ মাসের অধিক ছুটির আবেদনের ক্ষেত্রে অথবা ৩ মাসকে অতিক্রম পূর্বক ছুটি বর্ধিতকরণের ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ডের সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হবে (অনুচ্ছেদ-১১)।

গ) ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদানের ক্ষেত্রে ফিটনেস সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে। (অনুঃ-১৯ ও ২০)। 

ঘ) দাখিলকৃত মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বিষয়ে ছুটি মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হলে দ্বিতীয়বার মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পরীক্ষার আদেশ দিতে পারবেন। এইক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নিজেই যতশীঘ্র সম্ভব স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন (অনু-১৬)। 

খ) অর্ধগড় বেতনে অর্জিত ছুটিঃ

অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি ভোগের মেয়াদ নির্ধারিত না থাকলেও যেহেতু নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ এর বিধি-৭ অনুযায়ী পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কারণে এককালীন সর্বোচ্চ ১ (এক) বছর পর্যন্ত এবং স্বাস্থ্যগত কারণে ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত ছুটি প্রদান করা যায়, সেহেতু অর্ধ-গড় বেতনে ছুটির মেয়াদ দ্বারা উক্ত সময়সীমাকে অতিক্রম করা যাবে না।

গ) ছুটির সর্বোচ্চ মেয়াদঃ

নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ এর বিধি-৭ অনুযায়ী পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কারণে এককালীন সর্বোচ্চ ১ (এক) বছর পর্যন্ত এবং স্বাস্থ্যগত কারণে ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত ছুটি নেওয়া যায়। এক প্রকার ছুটির ধারাবাহিকতাক্রমে অন্য প্রকার ছুটি, এইভাবে একাধিক প্রকার ছুটি সম্মিলিতভাবে নেওয়া হলেও বিধি-৭ এর বর্ণিত উক্ত সর্বোচ্চ মেয়াদ অতিক্রম করা যাবে না।

ঘ) অর্ধ-গড় বেতনের ছুটিকে গড় বেতনের ছুটিতে রূপান্তরঃ

নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ এর বিধি-৩(১)(ii) অনুযায়ী স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটির ক্ষেত্রে অর্ধ-গড় বেতনের ছুটিকে প্রতি দুই দিনের জন্য একদিন গণনা করে সর্বোচ্চ ১২ (বার) মাস পর্যন্ত গড় বেতনের ছুটিতে রূপান্তর করা যাবে। ইহা ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ME/FD/Reg II/Leave-16/84/9, তারিখ-২১ জানুয়ারি, ১৯৮৫ অনুযায়ী ছুটি নগদানের ক্ষেত্রেও একই হারে অর্ধ-গড় বেতনের ছুটিকে গড় বেতনের ছুটিতে রূপান্তর করা যাবে।

ঙ) অর্ধ-গড় বেতনে ছুটিভোগকালে প্রাপ্য বাড়িভাড়া ভাতা ও চিকিৎসা ভাতাঃ

অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- MF/R-II/HR-1/77-260 (500), তারিখ- ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭ অনুযায়ী অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি ভোগকালীন বাড়িভাড়া ভাতা ও চিকিৎসাভাতা পূর্ণ হারে পাবেন।

১১.১ ছুটি হিসাব

কাজ করার বিনিময়ে ছুটি অর্জিত হয়। ‘ছুটি হিসাব’ এর জন্য কর্মকাল গণনার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সময় গণনাযোগ্যঃ

ক) নিজপদে নিয়োজিত সঠিক কর্মকাল । 

খ) প্রেষণে নিয়োজিত কালীন সময়।

গ) ফরেন সার্ভিসে কর্মরত সময় যদি ফরেন সার্ভিসে নিয়োজিত থাকাকালীন সময়ের লিভ সেলারী কন্ট্রিবিউশন সরকারের সঠিক/যথাযথ হিসেবে জমা দেওয়া হয়ে থাকে ।

ঘ) যোগদানকালীন সময় ।

ঙ) বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষায় বাধ্যতা-মূলক অংশ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় যাতায়াত সময় এবং পরীক্ষার দিনসমূহ ।

চ) প্রশিক্ষণে নিয়োজিত থাকাকালীন সময়।

ছ) নিয়োগ (পোস্টিং)-এর জন্য বাধ্যতামূলক অপেক্ষার সময়।

জ) নৈমিত্তিক ছুটি ভোগকালীন সময় । 

ঝ) সংগ নিরোধ ছুটি কালীন সময়।

২) নিম্নে উদ্ধৃত সময়কে ছুটির হিসেবে কর্মকাল গণনা করা যাবে না বা ধরা যাবে না : 

ক) সংগনিরোধ ও নৈমিত্তিক ছুটির সময় ছাড়া অন্যান্য ছুটিকালীন সময়।

খ) সাময়িক বরখাস্তকাল এবং জেল বা হাজত বাসের সময়কাল এবং পরবর্তী সময়ে কর্মকাল হিসেবে গণ্য না করার ক্ষেত্রে উক্ত সময়কাল।

গ) অননুমোদিত অনুপস্থিত সময়। 

ঘ) চাকুরিতে বিরতী সময়।

১১.২ অর্জিত ছুটির হিসাবের ব্যবহারিক উদাহরণঃ

একজন কর্মচারী ২২ ফ্রেরুয়ারি ২০০৩ তারিখে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে ২ মাসের ছুটিতে যাওয়ার আবেদন করেন। 

তার ছুটি সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যাদি নিম্নরূপঃ 

(ক) চাকরিতে যোগদানের তারিখঃ ২২ ফ্রেরুয়ারি, ২০০৩

(খ) ছুটিতে যাওয়ার আবেদনের তারিখঃ ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ 

(গ) ইতোপূর্বে ভোগকৃত সর্বমোট ছুটির পরিমাণঃ  

গড় বেতনে অর্জিত ছুটি- ৩ মাস 

অর্ধগড় বেতনে অর্জিত ছুটি -৩ মাস 

প্রসূতি ছুটি- ৬ মাস 

অসাধারণ ছুটি – ১ মাস

অধ্যয়ন ছুটি – ২ বছর

করণীয়ঃ উক্ত কর্মচারীর ছুটির হিসাব বের করুন?

গড় বেতনে ছুটির সমাধানঃ

তিনি যেহেতু ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখ থেকে ছুটিতে যাবেন, তাই ৩১ আগস্ট,২০২৩ তারিখ পর্যন্ত তার ছুটি হিসাব করতে হবে।

ছুটির হিসাবঃ

১। মোট চাকরিকালঃ

বিবরণ বছরমাসদিন
ছুটিতে যাওয়ার আবেদনের তারিখ২০২৩০৮০১
বাদঃ চাকরিতে যোগদানের তারিখ২০০৩০২২২
মোট চাকরিকাল = ২০ বছর০৫ মাস০৯ দিন

২। ইতোপূর্বের ছুটির হিসাবঃ

বিবরণবছর মাসদিন
ক। গড় বেতনে অর্জিত ছুটি০৩
খ। অর্ধ-গড় বেতনে অর্জিত ছুটি০৩
গ। প্রসূতি ছুটিকাল০৬
ঘ। অধ্যয়ন ছুটি২ বছর
ঙ। অসাধারণ ছুটি০১
মোট = ৩ বছর১ মাস

৩। ছুটির জন্য কর্মকালঃ

বিবরণবছর মাসদিন
মোট চাকরিকাল২০ বছর০৫ মাস০৯ দিন
বাদঃ  ইতোপূর্বে ছুটি ভোগ ০৩ বছর০১ মাস
অবশিষ্ট ছুটি = ১৭ বছর০৪ মাস০৯ দিন

৪। ছুটি হিসাবের জন্য কর্মকালঃ 

= ১৭ বছর ৪ মাস ৯ দিন 

= (১৭ × ৩৬৫) দিন + (৪ × ৩০) দিন + ৯  দিন

= ৬,৩৩৪ দিন।

৫। গড় বেতনে অর্জিত ছুটির পরিমাণঃ

= (৬,৩৩৪ / ১১) দিন = ৫৭৬ দিন (প্রায়)

= (৫৭৬ /৩০) মাস 

= ১৯ মাস ৬ দিন।

৬। প্রাপ্য ছুটির হিসাবঃ

বিবরণবছর মাসদিন
অর্ধ-গড় বেতনে ছুটির পরিমাণ১৯ মাস০৬ দিন
বাদঃ ইতোপূর্বে ভোগকৃত ছুটি০৩ মাস
অবশিষ্ট ছুটি =১৬ মাস০৬ দিন

অর্ধগড় বেতনে ছুটির হিসাবের সমাধানঃ (পূর্বের হিসাবকে ভিত্তি ধরে)

১। ছুটি হিসাবের জন্য কর্মকালঃ 

= ১৭ বছর ৪ মাস ৯ দিন 

= (১৭ × ৩৬৫) দিন + (৪ × ৩০) দিন + ৯  দিন

= ৬,৩৩৪ দিন।

২। অর্ধ-গড় বেতনে ছুটির পরিমাণঃ 

= (৬,৩৩৪/১২) দিন = ৫২৮ দিন (প্রায়) 

= (৫২৮/৩০) মাস = ১৭ মাস ১৮ দিন।

৩। প্রাপ্য ছুটির হিসাবঃ 

বিবরণবছর মাসদিন
অর্ধ-গড় বেতনে ছুটির পরিমাণ১৭ মাস১৮ দিন
বাদঃ ইতোপূর্বে ভোগকৃত ছুটি০৩ মাস
অবশিষ্ট ছুটি =১৪ মাস১৮ দিন

৪। অর্ধ-গড় বেতনকে গড় বেতনে পরিবর্তনঃ

= ১ বছর ২ মাস ১৮ দিন 

= (১×৩৬৫)দিন + (২×৩০) দিন  + ১৮ দিন  = ৪৪৩ দিন 

৫। গড় বেতনের দিন

= ৪৪৩/২ দিন = ২২২ দিন (প্রায়)

উপসংহারঃ 

চাকুরির নিয়মকানুন তথা আইন ও বিধিমালা নিয়ে আমার যতসামান্য পড়াশোনা আছে। এটি আমার  অধিকাংশ সহকর্মীই জানেন। সহকর্মীরা চাকুরি সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালার নানা বিষয় নিয়ে আমার সাথে আলোচনা করেন। আমি আমার সাধ্যমত তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। তবে ছুটি সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়েই জানতে চেয়েছেন সবচেয়ে বেশি। তাই এই নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো সহকর্মীদের ছুটি ও ছুটি বিধিমালা নিয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া।

আমার বলতে দ্বিধা নেই, এই লেখাটি মৌলিক কোন লেখা নয়। এটি লিখতে গিয়ে আমি বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজের সংবিধান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সরকারী-বেসরকারী স্কুল ও কলেজ এবং জাতীয়  বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি সংক্রান্ত বিধিমালার সাহায্য নিয়েছে। এছাড়া বাজারে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য প্রথিতযথা লেখকের বইয়েরও সাহায্য নিয়েছি। আমি তাঁদের বই পড়ে এই লেখার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং লেখার কাজ সম্পন্ন করেছি, তাই তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।     

Archives