ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ

প্রশ্নঃ ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি কাকে বলে? ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণির শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

উত্তর : ব্যাকরণগত চরিত্র ও ভূমিকা অনুযায়ী বাংলাভাষার শব্দগুলোকে যে কয়ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, তাকেই ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলে।

বাংলা শব্দশ্রেণিকে প্রথমত দুইভাগে ভাগ করা যায়।

ক) অর্থবাহী

খ) ব্যাকরণিক।

অর্থবাহী শব্দশ্রেণিকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়।

ক) আভিধানিক

খ) আবেগাত্মক (আবেগ শব্দ)।

ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণিকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়।

ক) যোজক

খ) অনুসর্গ।

আভিধানিক শব্দশ্রেণিকে আবার পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।

ক) বিশেষ্য খ) বিশেষণ গ) সর্বনাম ঘ) ক্রিয়া ঙ) ক্রিয়া-বিশেষণ।

নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

ক. বিশেষ্য : যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য বলে। যেমন-নজরুল, ঢাকা, মেঘনা, গাছ, পর্বত, নদী, সভা, সমিতি, জনতা, দুঃখ, সুখ ইত্যাদি।

খ. সর্বনাম : বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ বা পদ ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম বলে।যেমন-ইনসাদ ভালো ছেলে। সে নিয়মিত স্কুলে যায়। উল্লিখিত উদাহরণের দ্বিতীয় বাক্যটিতে সে শব্দটি ইনসাদ-এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। সে হলো সর্বনাম।

গ. বিশেষণ : বিশেষণ হচ্ছে বাক্যে শব্দকে বিশেষিত করে শব্দের অর্থকে বিশদ বা সীমিত করে। বিশেষণ যখন কোনো কিছুর গুণ বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে তখন বিশেষ্য শব্দের অর্থ বিশদ করে। যেমন-নীল আকাশ, ঠান্ডা হাওয়া, চৌকস লোক ইত্যাদি।

ঘ. ক্রিয়া : যে শব্দশ্রেণি বাক্যে কাল, প্রকার, পক্ষ ইত্যাদি বিভক্তি প্রয়োজন মতো গ্রহণ করে-

ক) বাক্যে বিধেয় অংশ গঠন করে এবং খ) কোনো কিছু করা, থাকা, ঘটা, হওয়া, অনুভব করা ইত্যাদি কাজে সংগঠন বোঝায় তাই ক্রিয়াশব্দ। যেমন-শফিক বই পড়ে। কাল একবার এসো।

অথবা, যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনো কিছু করা, থাকা, হওয়া, খাওয়া, ঘটা ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে।যেমন-সে হাসছে। বাগানে ফুল ফুটেছে। এবার বৃষ্টি হবে।

ঙ. ক্রিয়া বিশেষণ : যে শব্দ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। ক্রিয়া বিশেষণ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে। যেমন-সে দ্রুত দৌড়াতে পারে। ভ্রমর গুনগুনিয়ে গান গাইছে। সে এবার জোরে জোরে হাঁটছে।

চ. যোজক : যে শব্দ একটি বাক্যাংশের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যাংশ অথবা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায়, তাকে যোজক বলে। যেমন-মিমিয়া আর আলিয়া দুই বোন। তিনি হয় রিকশায় না-হয় হেঁটে যাবেন। তোমাকে চিঠি লিখেছি, কিন্তু উত্তর পাইনি।

ছ. অনুসর্গ : যে শব্দগুলো কখনো স্বাধীনরূপে আবার কখনো বা শব্দবিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে তার অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে অনুসর্গ বলে। যেমন-ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। তোমার জন্যে এটা আমার বিশেষ উপহার।

জ. আবেগ শব্দ : আবেগ শব্দের সাহায্যে মনের নানা ভাব বা আবেগকে প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের শব্দ বাক্যের অন্য শব্দগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত না হলে আলগা বা স্বাধীনভাবে বাক্যে বসে। মরি মরি! কী রূপমাধুরী! আরে, তুমি আবার কখন এলে! ছিঃ এমন কাজ তোর! আঃ! কি বিপদ!

Archives